একনজরে কুরআন কারিম: ৪
কুরআন কারিমের সুরাগুলোর অতি সংক্ষিপ্ত নির্যাস। একবার পড়ে রাখতে পারি। রব্বে কারিম উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
--
সূরাতু ক্বাফ!
মূলবক্তব্য: পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসের হাকিকত উপলব্ধির জন্য গাফেল কলব জাগিয়ে তোলা।
এই সুরা আবেগ ও অনুভূতির ওপর এক ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অন্তরকে কাঁপিয়ে তোলে। আত্মাকে নাড়িয়ে দেয়। এই সুরা তিলাওয়াতকারীর মনে গভীর বিস্ময়ের উদ্রেক করে। ভীতির সঞ্চার করে। কারণ এই সুরার আয়াতে আয়াতে তরগিব ও তারহিব বিদ্যমান। মৃত্যুপরবর্তী জীবনের কথা বলা হয়েছে। ধ্বংসের পর পুনর্জীবনের কথা আছে। এই জগতের পরতে পরতে ছড়িয়ে জড়িয়ে থাকা আল্লাহ তাআলার অযুতনিযুত কুদরতের দিকে মুশরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী মিথ্যাচারী কওমের কথা বলা হয়েছে। তাদের ওপর নানাবিধ আসমানি আযাব ও দুর্যোগ নেমে এসেছিল। পূর্ববর্তী সম্প্রদায় ধ্বংসের কথা বলে মক্কার মুশরিক কুরায়শকে সতর্ক করা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণা ও হাশরের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেই কঠিন দিনে অপরাধীরা ভয়ংকর গা শিউরানো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
শেষে বলা হয়েছে, এক বিকট আওয়াজ হবে। সেই আওয়াজের তীব্রতায় মানুষ কবর থেকে উঠে যাবে। তাদেরকে হিসাব প্রতিদানের জন্য হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। মুশরিকরা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করত। এই সুরায় কেয়ামতের অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়েছে। ঈমানের মৌলিক বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে। সৃষ্টির সূচনা ও পুনর্জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাওহিদ, নবুয়ত, ফিরিশতার প্রতি ঈমানের কথা বলা হয়েছে। মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে: দুর্ভাগা ও সৌভাগ্যবান। আল্লাহর জন্য পূর্ণতম বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি মানুষের জন্ম ও মৃত্যুদাতা। তিনি মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। মানুষের মৃত্যু ও পুনর্জীবন সময়কার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় বড় জমায়েতের সময় এই সুরা তিলাওয়াত করতেন। জুমার খুতবায়, দুই ঈদের নামাজে পড়তেন। ফজর নামাজেও পড়তেন।
সূরাতুয যারিয়াত!
মূলবক্তব্য: মাখলুককে তাদের খালেক ও রাজেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা খালেকের দিকে ফিরে যেতে পারে। তার প্রতি দাসত্বের হক আদায় করতে পারে। পুরো সুরার আলোচনা ঈমানের স্তম্ভগুলোকে মজবুত করে তুলেছে। পরাক্রমশালী এক আল্লাহর কুদরতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাকওয়া ও ঈমানের ভিতের ওপর আকিদার পোক্ত সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
মৃত্যুর পর অবশ্যই একসময় পুনরুত্থানের ঘটনা ঘটবে। একথা কসম করে ব্যক্ত করা হয়েছে। কেয়ামত ঘটবেই। পুনর্জীবন অবশ্যম্ভাবী। ভ্রষ্টদের জন্য আযাব অপেক্ষা করছে। হেদায়াত গ্রহণকারীদের জন্য আছে যথোপযুক্ত সওয়াব। কুরআনের চিরাচরিত ভঙ্গি-তরগিব ও তরহিব, ইনজার ও ইজার (অজুহাত গ্রহণের)-এর সাথে এসব কথা বলা হয়েছে। এই উন্মুক্ত বিস্তৃত বিশে^ আল্লাহর এককত্বের অফুরন্ত দলিল ছড়িয়ে আছে। মেহমানদারিতে ইবরাহিম আ. ছিলেন অনন্য মহত্বের অধিকারী। বৃদ্ধ বয়েসে ইবরাহিমকে ইসহাকের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। আলাইহিমুস সালাম। কওমে লুতকে ধ্বংস করা হয়েছে। ফেরাওন ও তার সেনাবাহিনীকে আত্মধিকৃত অবস্থায় পাকড়াও করা হয়েছে। আদ, সামুদ ও কওমে নুহকে পুরোপুরি ধ্বংস বিধ্বস্ত করা হয়েছে।
শেষে জিন ও ইনসান সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর মারেফাত হাসিল করা, আল্লাহর এবাদত করা, একমাত্র আল্লাহকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করার জন্যই এ দুই জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহর নৈকট্যসূচক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে একান্তভাবে আল্লাহর অভিমুখি হওয়ার সাধনায় মশগুল থাকা বান্দার কর্তব্য।
সূরাতুত তুর!
মূলবক্তব্য: বাতিলের প্রতিরোধ, মিথ্যাচারীদের অমূলক সন্দেহ অপনোদন।
সাইয়েদুল জিবাল-পাহাড়সমূহের নেতা ও সাইয়েদুল কুতুব-কিতাবসমূহের নেতার কসম দিয়ে সুরা শুরু হয়েছে। শুরুতে দুটি মহান নবুয়তের কথা আছে। তুর পাহাড় বলে মুসা আলাইহিস সালাম, কিতাব বলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা বলা হয়েছে। আখেরাতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কাফেররা সেদিন যে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কসম করে বলা হয়েছে, কাফেরদের ওপর আযাব নেমে আসা অবশ্যম্ভাবী। এটা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না। জান্নাতে মুত্তাকিগণ সুখ-সাচ্ছন্দ্যে থাকবে। খাটিয়া ও আসনসমূহে হেলান দিয়ে মুখোমুখি হয়ে বসবে। আল্লাহ জান্নাতিদের জন্য নানা সুখশান্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। তাদের জন্য ডাগর চক্ষুবিশিষ্টা হুর থাকবে। সন্তান-সন্ততি পরিবেষ্টিত পূর্ণ নিশ্চিন্ত জীবন কাটবে। হরেক রকম পানাহারের আয়োজন থাকবে। নানাবিধ ফলমূল, ভোগবিলাস থাকবে। নানারকম সুস্বাদু রসনাবিলাসি গোশতসহ অগণিত সুখাদ্য থাকবে। এসব নেয়ামত দুনিয়ার কেউ কখনো চোখে দেখেনি, চেখে দেখেনি, কানে শোনেনি, কল্পনা করেনি। রাসুলকে উপদেশ দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তাবলিগ করতে বলা হয়েছে। কাফেরদের সতর্ক করতে বলা হয়েছে।
অকাট্য দলিলের মাধ্যমে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেসালতের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে। আল্লাহর উলুহিয়তের সত্যতার ওপর অকাট্য দলিল পেশ করা হয়েছে।
শেষে নবিজিকে আদেশ করা হয়েছে, কাফেরদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিতে। তাদের কুকর্মে দুঃখিত না হতে। সতর্কবাণী কাফেরদের কোনো কাজে আসবে না। নবিজিকে সবরের আদেশ দেয়া হয়েছে। তাঁকে সাহায্য ও দৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। নবিজি সবসময় রবের শুকরিয়া আদায়ের আদেশ দেয়া হয়েছে।
সূরাতুন নাজম!
মূলবক্তব্য: ওহি ও রেসালত প্রমাণ করা হয়েছে।
মেরাজের আলোচনা দিয়ে সুরা শুরু হয়েছে। মেরাজ ছিল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজিযা। মেরাজের সফরে নবিজি আল্লাহর বিস্তৃত রাজত্বের অসংখ্য বিস্ময়কর ঘটনা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। নবিজির দেখা এসব ঘটনা ছিল মানবকল্পনা ও মনুষ্য চিন্তাভাবনার অতীত। মেরাজ নিয়ে ভাবলে হতবুদ্ধি হয়ে যেতে হয়। মানুষকে ঈমান ও বিশ^াসের ব্যাপারে কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। গাইব ও ওহি নিয়ে ঝগড়া-বিতর্ক পরিহার করতে বলা হয়েছে। দেবীমূর্তিদের কথা বলা হয়েছে। এসব ভ্রান্ত, অসার কাল্পনিক উপাস্যদের অক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিদান দিবসে সবাই ইনসাফপূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। নেককার তার সৎকর্মের পুরস্কার পাবে। বদকার তার বদকর্মের কর্মফল ভোগ করবে।
প্রাণীকে জীবন ও মৃত্যুদানে, ধনী ও দরিদ্রকরণে আল্লাহর অপার কুদরতের জীবন্ত নিদর্শন জড়িয়ে আছে। নিষিক্ত হওয়া শুক্রবিন্দু থেকে আল্লাহ নারী ও পুরুষের জোড়া সৃষ্টি করেছেন। পূর্ববর্তী অত্যাচারী ও সীমালঙ্ঘনকারী কওমে আদ, সামুদ, কওমে নুহ, কওমে লুতের ওপর নানা রকমের আযাব ও ধ্বংস নেমে এসেছিল। এসব বলে মক্কার কাফেরদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের জন্যও এমন আযাব অপেক্ষা করছে। কারণ তারাও আল্লাহর রাসুলকে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। সীমালঙ্ঘনকারীরা অবাধ্যতা ও হঠকারিতায় অনঢ় হয়ে আছে। এজন্য তাদেরকে ধমক দেয়া হয়েছে।
সূরাতুল কামার!
মূলবক্তব্য: আল্লাহর আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিথ্যাচারীদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর আয়াত অস্বীকারকারীদের ওপর প্রচ- আঘাত হানা হয়েছে। এই সুরার বর্ণনাভঙ্গিটাই ভিন্ন। পুরো সুরায় হুমকি-ধমকি আর ইনজার-ইজার (অজুহাত গ্রহণ) মেশানো বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। নানাভাবে আযাব ও ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
মুশরিকরা আল্লাহর রাসুলের কাছে অলৌকিক ঘটনা দাবি করেছিল। তাহলে তারা রাসুলকে সত্য বলে মেনে নিবে। সেই প্রেক্ষিতে চন্দ্রখ-নের ঘটনা দিয়ে সুরা শুরু হয়েছে। মুশরিকরাই চাঁদকে দুই খ- করে দিতে বলেছিল। এতবড় মুজিযা দেখার পরও কুরায়শ ঈমান আনেনি। রাসুলকে সত্য বলে মেনে নেয়নি। উল্টো তাদের একগুঁয়েমী ও হঠকারিতা বেড়ে গিয়েছিল। গা-শিউরানো ভঙ্গিতে কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। সেদিনের ঘটনার বিবরণে ভয়ে যে কারো অন্তারাত্মা কেঁপে উঠবে। পূর্ববর্তী মিথ্যাচারীদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। তাদের ওপর হরেক রকমের আযাব নেমে এসেছিল। কুরাইশের কাফেরদের সম্বোধন করা হয়েছে। পূর্ববর্তী কওমসমূহের মতো তাদের ওপরও অনুরূপ আযাব নেমে আসার হুমকি দেয়া হয়েছে। অপরাধী দুর্ভাগা কাফেরদের দুরবস্থা বর্ণনার পর, সৌভাগ্যবান মুত্তাকিদের সুখময় পরিণতির কথা বলা হয়েছে।
সূরাতুর রহমান!
মূলবক্তব্য: দুনিয়া আখেরাতে আল্লাহর নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর শোকর আদায়ের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করা বা নেয়ামত সম্পর্কে গাফেল থাকার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
শুরুতেই কুরআনের কথা। কুরআন রহমানের বড় নেয়ামত। রহমান দয়া করে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। বয়ান বা কথা বলতে শিখিয়েছেন। মিযান বা পাল্লার পরিমাপে ইনসাফ বজায় রাখতে বলা হয়েছে। আল্লাহ খোসাযুক্ত দানাশস্য ও রায়হান দান করেছেন। মানুষকে ঠনঠনা শুষ্ক মাটি থেকে বিস্ময়কর পদ্ধতিতে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সমুদ্র আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি। সমুদ্রে আছে আল্লাহর বিস্ময়কর কুদরতের নানা কারিশমা। সাগর থেকে বহুমূল্য প্রবাল ও মণিমুক্তা আহরিত হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠে আশ্চর্যজনক কুদরতে নৌযান ভেসে চলে। সমস্ত সৃষ্টি একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে। একমাত্র রহমান রহিম বাকি থাকবেন। অভাবগ্রস্তদের চাহিদা পূরণ করা হবে। হুজ্জত-প্রমাণ ছাড়া বান্দার মুক্তি নেই। যেদিনের ভয়ানক ধাক্কায় শিশুরা বৃদ্ধে পরিণত হবে, সেদিন আল্লাহর অনুগত ও অবাধ্য সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কাফের জাহান্নামে ডুবে মরবে, মুমিন সুখসম্ভারে মশগুল হবে। সৎকর্মশীলদের উত্তম বিনিময়ে ভূষিত করা হবে। ডাগরচোখা আনতনয়না হুর দেয়া হবে। মুত্তাকিগণ জান্নাতি বাগিচায় প্রমোদবিহার করবে। বান্দাকে নানাবিধ সম্মান ও নেয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা দিয়ে সুরা শেষ হয়েছে,
تَبٰرَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِی الْجَلٰلِ وَ الْاِكْرَامِ
বড় মহিয়ান তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি গৌরবময়, মহানুভব (রহমান: ৭৮)!
সূরাতুল ওয়াকিয়া!
মূলবক্তব্য: গুরুত্বের সাথে আকিদা রোপণ করা হয়েছে। আল্লাহর রুবুবিয়ত ও উলুহিয়তের দলিল পেশ করা হয়েছে। পুনর্জীবন ও প্রতিদানের প্রসঙ্গ দৃঢ় ভঙ্গিতে ব্যক্ত করা হয়েছে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী, জান্নাতি ও জাহান্নামি, দুনিয়াবাসী ও আখেরাতবাসীর সংবাদ দেয়া হয়েছে।
শুরু হয়েছে কেয়ামত সংঘটনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে। সেদিন ভয়ংকর পরিস্থির সৃষ্টি হবে। মানুষ সেদিন তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে,
ক. আসহাবে ইয়ামিন।
খ. আসহাবে শিমাল।
গ. সৌভাগ্যবানদের স্তরে উন্নীত হওয়া সাবিকুন।
প্রতিটি দলের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য উপযুক্ত ইনসাফপূর্ণ প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন। আল্লাহর অস্তিত্ব, এককত্ব, পরিপূর্ণ কুদরত, অপূর্ব সৃষ্টিনৈপুণ্য, অভিনব কর্মকুশলতার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। কুরআনের আলোচনা করা হয়েছে। কুরআন রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নাযিল করা কিতাব। মানুষ মৃত্যুর সময় যে ভয়ংকর কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তার চিত্র আঁকা হয়েছে। তিন প্রকার মানুষের বর্ণনা দিয়ে সুরা শেষ হয়েছে। সৌভাগ্যবান, দুর্ভাগা ও সুখভোগ ও সার্বিক কল্যাণের অধিকারী সাবিকুন (অগ্রগামী)। প্রত্যেকের পরিণতি ও পরিণাম বর্ণনা করা হয়েছে। সুরার শুরুতে যে আলোচনা সংক্ষিপ্ত ছিল, শেষে তা বিশদে বর্ণিত হয়েছে। শুরু ও শেষে নৈকট্যপ্রাপ্তদের কীর্তি আলোচনা করা হয়েছে।
সূরাতুল হাদীদ!
মূলবক্তব্য: ঈমান ও তার প্রভাব বিষয়ক আলোচনা। শরীয়ত, তরবিয়ত ও দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা গুরুত্ব পেয়েছে। ইসলামি সমাজকে বিশুদ্ধ আকিদা, উত্তম আখলাক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ শরিয়ার ওপর গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়েছে। রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। তাদের আদর্শ অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুরো সুরায় মূলত তিনটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে,
ক. পুরো বিশ^জগত আল্লাহর। তিনিই এই জগতের খালেক ও উদগাতা। আল্লাহ আপন ইচ্ছানুসারে এই জগত পরিচালনা করেন।
খ. আল্লাহর দ্বীনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী করতে, ইসলামের পতাকা উড্ডীন করতে আপন জানমাল কুরবানি করা আবশ্যক। ইসলামের দাওয়াতের দায়িত্ব দিয়েই আল্লাহ সর্বশেষ রাসুল পাঠিয়েছেন।
গ. দুনিয়ার হাকিকত তুলে ধরা হয়েছে। দুনিয়ার চাকচিক্য ও আড়ম্বর বড়ই ধোঁকাময়। মানুষ যেন দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে আখেরাত ভুলে না যায়। আখেরাতই প্রকৃত ও স্থায়ী আবাস। সেখানে কোনো কষ্ট নেই, ক্লান্তি নেই, দুশ্চিন্তা নেই, কষ্ট-দুর্ভোগ নেই।
সুরাতুল মুজাদালা!
মূলবক্তব্য: আল্লাহর ইলম সর্বত্র, সর্বব্যাপী। আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখেন জানেন, শোনেন, বোঝেন। খাওলা বিনতে সালাবার ঘটনায় এ বিষয়টাই প্রকাশ পেয়েছে। স্বামী আওস বিন সামিত রা. তার সাথে জিহার করেছিলেন। খাওলা নবিজির কাছে এসে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। পরোক্ষভাবে একথা বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। তাই আল্লাহবিরোধী কোনো আচরণ করার সময় বান্দার সতর্ক থাকা উচিত।
জিহারের বিধান ও তার কাফফারার বর্ণনা করা হয়েছে। ভর মজলিসে কানে কানে কথা বলার বিধান দেয়া হয়েছে। মুমিনদেরকে এমন কাজ করার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। নতুন কেউ মজলিসে এলে সরে বসে তাকে জায়গা করে দিতে বলা হয়েছে। আহলে ইলমের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। ইহুদিদের সাথে বন্ধুত্ব করা, ইহুদিদের ভালোবাসা মুনাফিকদের কথা বলা হয়েছে। তারা ইহুদিদের কাছে মুমিনদের গোপন সংবাদ পাচার করত। মুনাফিকরা আল্লাহ ও রাসুলের সাথে শত্রুতা করত। আল্লাহকে মহব্বত করা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করার হাকিকত বর্ণনা করা হয়েছে। এটাই ঈমানের মূল, দ্বীনের সুদৃঢ় হাতল। আল্লাহর দ্বীনে থাকতে হলে, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য ঘৃণার বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী। এই সুরায় সূক্ষè একটি বিষয়ের দিকে ইশারা আছে। মানুষ কার কাছে নিজের গোপন কথা বলবে, দুঃখ-দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করবে, সেটা সতর্কতার সাথে নির্বাচন করা উচিত। আর নিজের সুখদুঃখের কথা বলার জন্য, আল্লাহ তাআলার চেয়ে উত্তম, বিশ^স্ত আর অন্তরঙ্গ আর কেউ হতে পারে না। তিনিই আমার গোপন কথা শুনবেন, যেভাবে খাওলার কথা শুনেছেন। এর আগে ইয়াকুব আ.-এর কথা শুনেছেন (ইউসুফ: ৮৬)।
সূরাতুল হাশর!
মূলবক্তব্য: গযওয়া বনু নজির। তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছিল। শাস্তিস্বরূপ তাদেরকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় আল্লাহর কুদরত প্রকাশ পেয়েছে। ইহুদিরা সুরক্ষিত দুর্গে বাস করত। তারা বিশ^াস করত, তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। আল্লাহর আযাব এমন দিক থেকে এল, তারা কল্পনাও করতে পারেনি। ফাই ও গনিমতের বিধান বর্ণিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে। মুহাজিরদের ফজিলত ও আনসারের কীর্তি প্রকাশ করা হয়েছে। দুষ্ট মুনাফিকের কথা বলা হয়েছে। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদিদের সাথে যোগসাজশ করেছিল। তাদের সামনে ভয়ানক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। ঈমানদারদেরকে কেয়ামত দিবস সম্পর্কে নসিহত করা হয়েছে। ইনসাফ ও প্রতিদানের আখেরাতে সৌভাগ্যবানদের অবস্থান-মর্যাদা আর দুর্ভাগাদের অবস্থানে যোজন যোজন ফারাক থাকবে। আল্লাহর আসমায়ে হুসনা ও সমুচ্চ সিফাতের বর্ণনা করা হয়েছে।
সূরাতুল মুমতাহিনা!
মূলবক্তব্য: শরয়ি বিধানের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও ঘৃণা করা এই সুরার মূলবিষয়। এটাই ঈমানের দৃঢ়তম হাতল। শুরুতে হাতেব বিন আবি বালতাআ রা.-কে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। নবিজি মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই গোপন সংবাদ জানিয়ে হাতেব মক্কাবাসীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছিলেন। আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তারা আল্লাহর রাসুল ও মুমিনদেরকে কষ্ট দিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে হিজরত করতে বাধ্য করেছিলে। ইবরাহিম আ. ও তাদের সাথিদের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। তারা মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল। যুদ্ধ ও শান্তি, বন্ধুত্ব ও শত্রুতার সময় মুসলিম ও আহলে কিতাবের সম্পর্ক কেমন হবে, তার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। কুফরভূমি থেকে হিজরত করে আসা মুমিন নারীদের পরিক্ষা করে গ্রহণ করা আবশ্যক। হিজরত করে আসা নারীদের ঈমান প্রমাণিত হলে, তাদেরকে ফেরত পাঠানো যাবে না। তাদের কাফের স্বামীদের মোহরানা ফেরত দিতে হবে। রাসুলের কাছে নারীদের বায়আত নেয়ার বিধান ও শর্তাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম জাতির ঐক্যের নিমিত্তে, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
সূরাতুস সফ!
মূলবক্তব্য: দ্বীনের সাহায্যে এগিয়ে আসা।
আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ-কিতালের কথা দিয়ে শুরু হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে শক্তিশালী ও আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত রাখার জন্য কুরবানি করার কথা বলা হয়েছে। মুসা ও ঈসা আ.-এর দাওয়াতের প্রতিরোধে ইহুদিদের অবস্থান বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর দ্বীন, নবি ও ওলিদের সাহায্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর সুনান বা কর্মনীতির কথা বলা হয়েছে। ছোট্ট তুচ্ছ মুখে ফু দিয়ে সূর্যের আলো মুছে দিতে চাওয়া ব্যক্তির সাথে আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্পকারী মুশরিকদের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। মুমিনদেরকে লাভজনক ব্যবসার দিকে আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থায়ী সৌভাগ্য লাভের জন্য, তাদেরকে জানমাল দিয়ে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। জিহাদের ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে। তা হল, দুনিয়াতে বিজয় ও আখেরাতে জান্নাতলাভ। মুমিনদেরকে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। যেমনটা করেছিলেন, ঈসা আলাইহিস সালামের হাওয়ারিগণ। যখন তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল, তারা সানন্দে সাড়া দিয়েছিলেন ও জয়ী হয়েছিলেন।
সূরাতুল জুমুআ!
মূলবক্তব্য: এই উম্মাহর ফজিলত ও দ্বীন ইসলামের শেআর বা প্রতীক।
খাতামুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের আলোচনা করা হয়েছে। তিনি হেদায়াপ্রাপ্ত রহমত। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ আরব-আজমকে শিরকের অন্ধকার থেকে উদ্ধার করে ইসলামের নুরের দিকে নিয়ে এসেছেন। ইহুদি ও আল্লাহর দেয়া শরিয়ত থেকে তাদের বিচ্যুতির কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে গাধার সাথে তুলনা করা হয়েছে। গাধা পিঠে উপকারী কিতাব বহন করে, নিজে কিতাব থেকে উপকৃত হতে পারে না। কষ্ট আর ক্লান্তি শুধু তার প্রাপ্তি হয়। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্ভাগ্য আর লাঞ্ছনা। জুমার বিধান বলা হয়েছে। মুমিনগণকে দ্রুত জুমার দিকে ধাবিত হতে বলা হয়েছে। জুমার আযান হলে বেচাকেনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। মুনাফিকের মতো, ব্যবসাবাণিজ্য ও খেলাধূলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে সলাতের প্রতি উদাসীন হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। মুনাফিকরা অত্যন্ত হেলাভরে অলসতা নিয়ে সলাতে দাঁড়ায়।
সূরাতুল মুনাফিকুন!
মূলবক্তব্য: নিফাক ও মুনাফিকদের নিন্দা। তাদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ফাঁস। তাদের হীন-নিকৃষ্ট স্বভাবের ব্যাপারে মুমিনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।
শুরুতে মুনাফিকদের হীন স্বভাব ও নিকৃষ্ট চরিত্রের কথা বলা হয়েছে। তাদের সবকিছু মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভেতরটা বাহিরের বিপরীত। তারা অন্তরে যা বিশ^াস করে, মুখে তার বিপরীতটা বলে। তারা রাসুল ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছিল। আল্লাহ তাদের অপরাধ ও ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়ে, তাদেরকে লাঞ্ছিত অপদস্থ করেছেন। তারা বাহ্যিক ও মৌখিকভাবে নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করে, মানুষকে ইসলাম থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করত। ইসলামের দাওয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালাত। স্বঘোষিত কাফেরও এমনটা করতে পারত না। এজন্য মুনাফিকরা ইসলাম ও মুসলমানের জন্য চরম বিপদজনক। তাদের দিক থেকে আসা বিপদও কাফেরদের তুলনায় হাজারগুণ বেশি ভয়ংকর। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাদের ঘৃণিত উক্তি ও বিশ^াস সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, নবিজির দাওয়াত অচিরেই বিলুপ্ত বিলীন হয়ে যাবে। তারা গাযওযা বনু মুস্তালিক থেকে ফেরার সময় বলেছিল, এবার মদিনায় ফিরেই আল্লাহর রাসুলকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করে দিবে। এছাড়া ন্যাক্কারজনক আরো কথাবার্তা বলেছিল তারা। মুমিনগণকে মৃত্যু আসার আগেই, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেদিন মানুষের আফসোসের সীমা থাকবে না। দুনিয়ার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত অনুতপ্ত হতে হবে। তখন আফসোস করে কোনো লাভ হবে না।
সূরাতুত তাগাবুন!
মূলবক্তব্য: ঈমান-আমলে ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বলা হয়েছে। ক্ষতির কারণ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় বলা হয়েছে।
শুরুতে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করে নেয়া মুমিন ও আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকারকারী কাফের সম্পর্কে বলা হয়েছে। বিগত যুগ ও সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে। তারা আল্লাহর রাসুলগণকে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তাদের ওপর নেমে এসেছিল আল্লাহর আযাব ও শাস্তি। পুনরুত্থান অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের আদেশ দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো স্ত্রী ও সন্তানের শত্রুতার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান অনেক সময় মানুষকে হিজরত ও জিহাদে বাধা সৃষ্টি করে। আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে বলা হয়েছে। কৃপণতার বাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য ব্যয়কারী সৎকর্মশীলদের জন্য দ্বিগুণ সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
সূরাতুত তালাক!
মূলবক্তব্য: তালাক ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়। তালাক অনিবার্য হলে তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি ও মেনে নেয়ার বিষয়ে আলোকপাত।
সুন্নতি তালাক ও বেদাতি তালাকের কথা বলা হয়েছে। দাম্পত্য জীবন চালিয়ে নেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালে, তালাকদানের ব্যাপারে মুমিনদেরকে সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে, শরিয়তসম্মত পন্থায় তালাক দিতে বলা হয়েছে। পুরুষকে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। দাম্পত্য সম্পর্কটা ভেঙে ফেলতে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। তালাক আল্লাহর কাছে ঘৃণিত হালাল হিসেবে বিবেচিত। তালাকের পর গুরুত্ব দিয়ে ইদ্দতকাল গণনা করতে বলা হয়েছে। যাতে একজনের বংশ আরেকজনের সাথে মিশে যাওয়ার আশংকা না থাকে আর তালাকপ্রাপ্তাকেও বেশিদিন বিয়েহীন অবস্থায় থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়। হায়েজ বন্ধ হয়ে যাওয়া নারী, অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে ও গর্ভবতী নারীর ইদ্দতকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে। তালাকপ্রাপ্তার বাসস্থান, নাফাকা (খরচা) সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। তাদের ওপর নেমে আসা আযাব ও ধ্বংস সম্পর্কে বলা হয়েছে। সাত আসমানকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি ও জমিন সৃষ্টিতে আল্লাহর কুদরতের কথা বলা হয়েছে। এসব আল্লাহর এককত্বের প্রমাণ বহন করে।
সূরাতুত তাহরিম!
মুসলিম পরিবার গঠন, প্রতিপালন ও সংশোনমূলক দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নবিগৃহ ও নবিপতœী উম্মাহাতুল মুমিনিন সম্পর্কিত কিছু বিধান আলোচিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলামি আদব-শিষ্টাচার আঁকড়ে ধরা সুখি মুসলিম পরিবার গঠনের রূপরেখাও পেশ করা হয়েছে। শুরুতে বলা হয়েছে, নবিজি অন্য স্ত্রীদের খুশি করতে, আপন বাঁদী মারিয়া কিবতিয়াকে নিজের ওপর হারাম করে নিয়েছিলেন। এজন্য সুরার শুরুতে নবিজির প্রতি মৃদু ভর্ৎসনা উচ্চারিত হয়েছে। তারপর পারিবারিক, পারস্পরিক, দাম্পত্য গোপনীয়তা ফাঁস করার মতো গুরুতর বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এমন কাজে দাম্পত্যজীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। এ ব্যাপারে নবিজিকে দিয়ে দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। তিনি হাফসা রা.-এর কাছে একটি গোপন কথা বলেছিলেন। হাফসা সেকথা আয়েশা রা.-এর কাছে ফাঁস করে দিয়েছিলেন। ব্যাপারটা ওহির মাধ্যমে জানতে পেরে নবিজি রাগ করেছেন। এই ঘটনার জেরে নবিজি তার স্ত্রীদের তালাক দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। খোদ আল্লাহ তাআলা রাসুলের সমর্থনে উম্মাহাতুল মুমিনিনকে হুমকি দিয়েছেন। আল্লাহ তার রাসুলের জন্য বর্তমান স্ত্রীদের বদলে আরো ভালো স্ত্রী ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন। শেষে দুটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। মুমিন ব্যক্তির কাফের স্ত্রী, কাফের ব্যক্তির মুমিন স্ত্রীর দৃষ্টান্ত। আখেরাতে কেউ কারো কাজে আসবে না। নেক আমল না থাকলে, সেদিন বংশগোত্র কোনো কাজে আসবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন