একনজরে কুরআন কারিম: ৫
কুরআন কারিমের সুরাগুলোর অতি সংক্ষিপ্ত নির্যাস। একবার পড়ে রাখতে পারি। রব্বে কারিম উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
--
সূরাতুল মুলক!
আল্লাহর রাজত্ব ও কর্তৃত্বের পূর্ণতার প্রকাশ ঘিরেই সুরা মুলকের আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে। আল্লাহর ভয় জাগিয়ে তোলা হয়েছে। শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহর একত্বের দলিল, আল্লাহর কুদরত, বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের আলোচনা করা হয়েছে। এই বিশ^জগতে আল্লাহর সৃষ্টিনৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাফেরদের অবস্থা, কেয়ামতদিবসে মুমিনের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। আসমান-জমিনের রাজত্ব-কর্তৃত্ব নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। মিথ্যাাচারীদের মুখের ওপর ছুঁড়ে মারার জন্য, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুস্পষ্ট অকাট্য যুক্তি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কুদরতের পূর্ণতা স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনার মাধ্যমে কুফর ও কাফেরের বিরুদ্ধে হুজ্জত কায়েম করা হয়েছে । সুরা মুলকের প্রধান তিনটি উদ্দেশ্য
ক. জীবন ও মৃত্যুদানে আল্লাহর পূর্ণ কুদরত ও বড়ত্ব প্রমাণ করা।
খ. আল্লাহর কুদরত ও একত্বের সপক্ষে সুস্পষ্ট আর উজ্জ্বল দলিল পেশ করা।
গ. মৃত্যুর পর পুনর্জীবন ও পুনরুত্থান অস্বীকারকারী মিথ্যাচারীদের পরিণতি বর্ণনা করা।
সূরাতুল কলম!
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত সাব্যস্ত করা হয়েছে। নবিজির কলবকে আশ^স্ত করা হয়েছে। তিনটি মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়েছে,
ক. রেসালত। আল্লাহর রাসুলের দাওয়াত সম্পর্কে মক্কাবাসীর উত্থাপিত সন্দেহ-অভিযোগ রদ করা হয়েছে। নবিজির মর্যাদা, মহোত্তম চরিত্র আর সুন্দর গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে।
খ. বাগানমালিকদের কিসসা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার কারণে তাদের ওপর নেমে আসা শাস্তির কথা আছে। বাগান মালিকরা ফকির-মিসকিনকে প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত করেছিল। আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকারকারীদের পরিণতি বর্ণিত হয়েছে।
গ. কেয়ামতের ভয়াবহতা, সেদিনের কঠিন পরিস্থিতির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ মুসলিম ও মুজরিম (কাফের অপরাধী)-র জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছেন, সেটা বলা হয়েছে।
সূরাতুল হাক্কাহ!
চিন্তাভাবনা আর অনুধ্যান করে পড়লে, সুরা হাক্কাহ মনের ওপর গভীর রেখাপাত করে। কেয়ামতের ভয়াবহ বর্ণনা পড়ে গা শিউরানো ভয়ে শরীর ছমছম করে ওঠে। এই দ্বীন সবধরণের মিথ্যা-সন্দেহমুক্ত সত্য দ্বীন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তার সবই অকাট্য সত্য। এই সুরার নাম থেকেই এটা বোঝা যায়। হাক্কাহ-অবশ্যম্ভাবী অনিবার্য সত্য। বিগত কাফের ও মিথ্যাচারী সম্প্রদায়ের শোচনীয় পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আদ, সামুদ, কওমে লুত, ফেরাওন, কওমে নুহসহ অন্যান সীমালঙ্ঘনকারী, উদ্ধত, পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কওমের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। সেই ভয়ংকর দিনে সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের অবস্থা চিত্রিত করা হয়েছে। সেদিন মুমিনকে ডানহাতে আমলনামা দেয়া হবে। মুমিন সম্মান ও অনুগ্রহ লাভ করবে। কাফেরকে বামহাতে আমলনামা দেয়া হবে। কাফের সেদিন লাঞ্ছনা-গঞ্জনার সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এদিনের ভয়াবহতার প্রচ- ভীতি জাগানিয়া মানসিক চাপ শিশুকে শুভ্রচুলা বৃদ্ধ বানিয়ে দিবে। কুরআনের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে। কুরআন প্রজ্ঞাময় সর্বজ্ঞের কালাম। কাফেররা বলেছিল, মুহাম্মাদ নিজে রচনা বানিয়ে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়েছে। নবিজিকে এই অপবাদ থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
সূরাতুল মাআরিজ!
মক্কার কাফের ও তাদের মৃত্যুপরবর্তী পুনর্জীবন অস্বীকারের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। তারা রাসুলের দাওয়াত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ-উপহাস করত। কেয়ামত দিবস ও তার ভয়াবহতার কথা আছে। সেদিন কেউ সৌভাগ্যবান হবে, কেউ দুর্ভাগা হবে। কেউ আরামে থাকবে, কেউ কষ্ট-ক্লান্তিতে। মুমিনদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। মুমিনদের কিছু চমৎকার গুণাবলী আর উত্তম আখলাকের ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। কেয়ামত দিবসে তাদের জন্য আল্লাহ বিরাট প্রতিদান ও সওয়াব প্রস্তুত করে রেখেছেন। জান্নাতে প্রবেশের প্রত্যাশী অপরাধী কাফেরের অবস্থাও তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, জাহান্নামের আগুনের স্বাদ আস্বাদন করাবেন। মাআরিজ মানে উর্ধারোহণের সিঁড়ি। সুরা মাআরিজে জমিনে বাস করা মানবাত্মাকে যেন আহ্বান জানানো হয়েছে, মাটির নিচুতা থেকে নিজেকে আসমানি উচ্চতায় উঠিয়ে নিতে।
সূরাতু নুহ!
আল্লাহর দিকে দাওয়াতে মরণপণ চেষ্টা কথা বলা হয়েছে। নুহ আ.-এর দাওয়াতের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পুরো দাওয়াতি সফরে তিনি যে অবিশ^াস্য সবর, মুজাহাদা ও আত্মত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, তা সংক্ষেপে বলা হয়েছে। তিনি দিনরাত তার কওমের পেছনে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত করে গেছেন। গোপনে ও প্রকাশ্যে। তিনি যত দাওয়াত বৃদ্ধি করেছেন, তার কওমের কুফরি, হঠকারিতা, অবাধ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘ দাওয়াতেও তাদের মন নরম হয়নি। নসিহত-উপদেশও তাদের কানে প্রবেশ করেনি। শেষে সর্বব্যাপী প্লাবনের কথা বলা হয়েছে। নুহ তার কওমের জন্য বদদোয়া করেছিলেন। আল্লাহ মিথ্যাচারী কাফের কওমে নুহকে ডুবিয়ে মেরেছেন। আল্লাহর দাওয়াত গ্রহণে অনীহ ও সত্যচ্যুত কওমের ক্ষেত্রে এটাই আল্লাহর সুন্নাহ বা কর্মপদ্ধতি। যুগে যুগে বিভিন্ন কওমে ওপর আল্লাহর এই সুন্নাহ বাস্তবায়িত হয়েছে। প্লাবনের ঘটনায় প্রেরিত নবিগণের উত্তম পরিণতি আর মিথ্যাচারী অপরাধী সম্প্রদায়ের অন্তিম অবস্থা ফুটে উঠেছে। সর্বকালের দাঈদের জন্যও অমূল শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহর রাস্তার দাঈকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হয়। বিন্দুমাত্র বিরক্ত অসহিষ্ণু না হয়ে একটানা, অনবরত মেহনত চালিয়ে যেতে হয়। দাওয়াতি কৌশলেও নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করতে হয়।
সূরাতুল জিন!
জিনদের কথাই প্রধানত আলোচিত হয়েছে। একদল জিন নবিজির তিলাওয়াত শুনে কাছে এসেছিল। কুরআন শুনে মুগ্ধ হয়ে ঈমান এনেছিল। জিনদের কিছু বিস্ময়কর অজানা সংবাদ দেয়া হয়েছে। মানুষের মতো জিনদের মধ্যেও ভালো ও মন্দ আছে। তারা গাইব জানে না। আমলের জন্য তারাও পুরষ্কৃত ও তিরস্কৃত হবে। তারা নিজের ইচ্ছায় কারো উপকার-অপকার করতে পারে না। তারাও মানুষের মতো পরিপূর্ণ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। আল্লাহর কুদরত তাদের ওপরও পূর্ণ ক্রিয়াশীল। আল্লাহ তাআলার কিছু চির-অপরিবর্তনীয় সুন্নাহ বা কর্মপন্থার কথা বলা হয়েছে। যারা সিরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথের ওপর চলবে, দুনিয়া-আখেরাতে তারা উত্তম জীবন যাপন করবে। নবীজিকে মুশরিকদের মিথ্যাচার ও সন্দেহ অভিযোগের জবাব শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। মুশরিকদের নির্বুদ্ধিতা, হঠকারিতার বিপরীতে নবিজির জন্য সান্ত¡নাপ্রদ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যা নবিজির মনটাকে নির্ভার করেছে। দাওয়াত ও তাবলিগে সহায়ক হয়েছে।
সূরাতুল মুযাম্মিল!
কঠিন পরিস্থিতি ও জীবনে দুর্যোগময় অবস্থা মোকাবেলায় দাঈদের কী করণীয়, সুরাটিতে তার উত্তম পাথেয় আছে। নবিজীবনের কিছু টুকরো চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদতে নবিজির একাগ্র নিষ্ঠা, আল্লাহর প্রতি নবিজির আনুগত্য, সবর, জিহাদ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তিলাওয়াতের কথা বলা হয়েছে। রাসুলের দাওয়াতের প্রতি মুশরিকদের অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। নবিজি মুশরিকদের কাছে কল্যাণ ও হেদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। মুশরিকরা হেদায়াত গ্রহণ না করে, নবিজির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, নবিজিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে, নবিজির দাওয়াতকে রুখে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। মুশরিকদের শিক্ষার জন্য অত্যাচারী ফেরাওনের দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। তার ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুশরিকরা সতর্ক না হলে, তাদেরও অবস্থাও ফেরাওনের মতো হবে। আল্লাহর রাসুল ও সাহাবায়ে কেরাম যাতে জীবন ও জীবিকার পেছনে আরেকটু বেশি সময় দিতে পারেন, এজন্য আল্লাহ তাআলা দয়া করে, নবিজি ও মুমিনদের ওপর থেকে তাহাজ্জুদ আদায়ের দায়িত্ব হালকা করে দিয়েছেন।
সূরাতুল মুদ্দাসসির!
দাওয়াতি মেহনতে চেষ্টা-মুজাহাদা-অধ্যবসায়কে ঘিরে এই সুরার আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে। শুরুতেই আল্লাহর রাসুলের কাঁধে দাওয়াতের দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। দাওয়াত ও তাবলিগের দায়িত্ব উদ্যম ও আন্তরিকতার সাথে করার তাকিদ দেয়া হয়েছে। কাফেরদের সতর্ক করতে বলা হয়েছে। তাদের কষ্ট-নির্যাতনে সবর করতে বলা হয়েছে। একসময় আল্লাহই রাসুল ও তার শত্রুদের ফয়সালা করবেন। অপরাধীদের হুমকি দেয়া হয়েছে। তাদেরকে এক কঠিন দিবসের ভয় দেখানো হয়েছে। দুর্ভাগা পাপী ওলিদ বিন মুগিরার কিসসা বর্ণনা করা হয়েছে। সে কুরআন শুনে বুঝতে পেরেছিল, এটা রহমানের কালাম। কিন্তু নেতৃত্বের মোহে, কর্তৃত্বের লোভে কুরআনকে চিরাচরিত জাদু আখ্যা দিয়েছিল। জাহান্নামের চিত্র এঁকে কাফেরদের ভয় দেখানো হয়েছে। জাহান্নামের কঠোর নির্দয় প্রহরীর কথা বলা হয়েছে। জাহান্নামিদের শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব তাদের কাঁধে ন্যস্ত। জাহান্নামের প্রহরীদের সংখ্যা বলা হয়েছে। প্রহরিদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করার হেকমত বলা হয়েছে। মুশরিকরা কেন ঈমান উপেক্ষা করে, তার কারণ বলা হয়েছে।
সূরাতুল কিয়ামাহ!
পুনর্জীবন ও প্রতিদানকে ঘিরেই এই সুরার আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে। পুনর্জীবন ও পুনরুত্থান ঈমানের অন্যতম রুকনও বটে। কেয়ামত ও তার ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে। সেদিন মানুষ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগা। সৌভাগ্যবানদের চেহারা হবে উজ্জ্বল। তারা প্রিয় রবের দিকে তাকানোর দুর্লভ সৌভাগ্য লাভ করবে। দুর্ভাগাদের চেহারা হবে নিষ্প্রভ, মলিন, কালিমালিপ্ত, বিষন্ন, অন্ধকার। মৃত্যুর সময় মানুষের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তখন মানুষ এমন কষ্ট আর যন্ত্রণার মুখোমুখি হবে, যা তার কল্পনাতেও ছিল না। হাশর, কেয়ামত, পুনর্জীবনের সত্যতা প্রমাণে দলিল-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
সূরাতুদ দাহর!
শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষকে তার শ্রেষ্ঠতম লক্ষ জান্নাতের ব্যাপারে সজাগ করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো সুরায় সামষ্টিকভাবে আল্লাহর আনুগত্য, আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহণ, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা, আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করিয়ে দেয়া, আল্লাহর অনুগ্রহের অনুভূতি জাগ্রত করা, আল্লাহর আযাবকে ভয় করে বেঁচে থাকার চেষ্টা, আল্লাহর দেয়া পরীক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা, আল্লাহর সৃষ্টি, নেয়ামত ও অবকাশ দানের হেকমত উপলব্ধির দিকে সূক্ষè কোমল আহ্বান জানানো হয়েছে।
আলোচনা শুরু হয়েছে, মানুষকে স্তরে স্তরে, ধাপে ধাপে সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রস্তুত করেছেন ইবাদতের জন্য। মানুষকে সৃষ্টির প্রধানতম উদ্দেশ্যই হল আল্লাহর ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মানুষকে চোখ-কান ও ইন্দ্রিয়শক্তি দিয়েছেন। জান্নাতিদের জন্য প্রস্তুতকৃত নেয়ামত, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। সেইসব সৌভাগ্যবান জান্নাতিদের কিছু সিফাত-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তারা নজর-মানত পূর্ণকারী, রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় আহার দানকারী ইত্যাদি গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর কাছে (জান্নাতে) মুমিনদের জন্য যে সম্মান ও প্রতিদান আছে, তার কথা বলা হয়েছে। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ আর নেয়ামত দান বর্ষণ করবেন। পানাহার, পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদেম-সেবক ইত্যাদি নিয়ে জান্নাতিগণ কেমন সুখে থাকবেন, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সচেতন সজাগ কলবের অধিকারীর জন্য কুরআন জীবন্ত উপদেশ। সত্যসন্ধানী চিন্তার অধিকারীর জন্য কুরআন এক উজ্জল আলোকমালা।
সূরাতুল মুরসালাত!
এই সুরার আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে কেয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামকে ঘিরে। কেয়ামতের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। মিথ্যাচারী কাফেরকে এদিনের অবর্ণনীয় কষ্ট, দুঃসহ যন্ত্রণা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। কেয়ামত দিবসে শীতলতা, শান্তিময়তা, ছায়া মুত্তাকিদের জড়িয়ে রাখবে। এসব ভয় ও আশার চিত্র আঁকা হয়েছে জ্ঞানী, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের জন্য উপদেশ স্বরূপ। জালেম, দুষ্টদের সতর্কতার জন্য। কেয়ামত যে নিশ্চিতভাবে ঘটবেই, সুরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমে কয়েক শ্রেণীর ফেরেশতার কসম দেয়া হয়েছে। বিশ^জগতের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনার দায়িত্বভার এই ফেরেশতাগণের কাঁধে ন্যস্ত। কসম খেয়ে বোঝানো হয়েছে, কেয়ামত সত্য, ধ্বংস ও আযাব কাফেরের ওপর পতিত হবে। অপরাধীদের ওপর প্রতিশ্রুত আযাব কখন আসবে, তার সময় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মৃত্যুর পর মানুষকে পুনর্জীবিত করা, ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর মানুষকে নতুন করে সৃষ্টি করার ব্যাপারে আল্লাহর যে নিরংকুশ ক্ষমতা আছে, তার সপক্ষে দলিল-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। অপরাধীদের পরিণতির চিত্র আঁকা হয়েছে। তারা যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করবে তার কথা বলা হয়েছে। মুমিনদের প্রত্যাবর্তনস্থলের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য সম্মান, নেয়ামত, সুখ-সাচ্ছন্দ্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। সবশেষে কাফেররা এক আল্লাহর ইবাদত কেন করে না, তার কারণ বলা হয়েছে।
সূরাতুন নাবা!
দলিল- প্রমাণের মাধ্যমে পুনর্জীবন ও প্রতিদান প্রমাণ করা নিয়েই এই সুরার আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে। শুরুতে কেয়াত ও মৃত্যু পরবর্তী পুনর্জীবন সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টাই মক্কায় অনেক লোকের মাথায় ঝেঁকে বসেছিল। তারপর আল্লাহর কুদরতের সপক্ষে দলিল-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। তারপর পুনর্জীবনের কথা বলা হয়েছে। পুনর্জীবনের সময় ও মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। তখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাইকে হিসাবের জন্য জড়ো করবেন। জাহান্নামের কথা বলা হয়েছে। কাফেরদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাহান্নামে আছে নানা রকমের লাঞ্ছনাকর। মুত্তাকিদের কথা বলা হয়েছে। তাদের জন্য আল্লাহ নানাবিধ নেয়ামত প্রস্তুত রেখেছেন। শেষে কেয়ামতের ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে। সেদিন কাফের আযাব থেকে বাঁচার জন্য মাটি হয়ে যেতে চাইবে।
সূরাতুন নাযিআত!
এ সুরায় কেয়ামত ও তার ভয়াবহতা, মুত্তাকি ও মুজরিমের পরিণতি বিষয়ক আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। পুণ্যবান ফিরিশতাগণের কসম দেয়া হয়েছে। তারা মুমিনের রূহ কোমল নরমভাবে কবজ করে। মুজরিম-অপরাধীর রূহ নির্মম রূঢ়তায় কবজ করেন। পুনর্জীবন, পুনরুত্থান অস্বীকারকারী মুশরিকের কথা বলা হয়েছে। সে ভয়াবহ দিনে অপরাধীদের অবস্থা কেমন হবে, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দাম্ভিক প্রতাপশালী ফেরাওনের কথা বলা হয়েছে। সে নিজেকে রব বলে দাবি করেছিল। সে তার দম্ভ অবাধ্যতায় ঘোরতরভাবে লিপ্ত ছিল। আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাকে কওমসহ ডুবিয়ে মেরেছেন। মক্কাবাসীর অবাধ্যতার কথা বলা হয়েছে। তারা রাসুলের বিরুদ্ধে শয়তানি করেছিল। তাদেরকে স্মরন করিয়ে দেয়া হয়েছে, আল্লাহর অনেক মাখলুক থেকেও দুর্বল। তাদেরকে ধ্বংস করা আল্লাহর কাছে কিছুই নয়। শেষে কেয়ামত ঘটার সময়কাল নিয়ে কথা হয়েছে। মুশরিকরা কেয়ামতকে অসম্ভব মনে করত। তারা কেয়ামত অস্বীকার করত। কেয়ামত ঘটার বিষয়টাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করত।
সূরাতু আবাসা!
মানবীয় মূল্যবোধ শুদ্ধ করা, মানুষের পদমর্যাদা ও ওজনের ইসলামি মূলনীতি বর্ণনাকে ঘিরেই এই সুরার আলোচ্য বিষয় আবর্তিত হয়েছে। মানুষের মূল্য নির্ধারিত হবে তার আমল ও আচরণ দ্বারা। আসমানি হেদায়াত অনুসরণের পরিমান দ্বারা। খাদিজা রা.-এর ফুফাত ভাই, অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা.-এর কিসসা দিয়ে। তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসেছিলেন। ইলম শেখার জন্য। তিনি হাজির হয়ে বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনাকে আল্লাহ যা শিখিয়েছেন, তা থেকে আমাকেও কিছু শেখান। আল্লাহর রাসুল তখন মক্কার বড় নেতাদের সাথে দাওয়াতি কাজ মশগুল ছিলেন। তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। বারবার ডাকায় বিরক্তিতে নবিজির কপাল কুঞ্চিত হয়েছিল। তখন মৃদু ভর্ৎসনামূলক আয়াত নাযিল হয়। আল্লাহ মানুষকে নেয়ামতে ডুবিয়ে রাখা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহর সাথে কুফরি করে। ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জানায়। আল্লাহর কুদরতের দলিল দেয়া হয়েছে। আল্লাহ সমতল ভূপৃষ্ঠে মানুষের জীবনযাপন সহজ করে দিয়েছেন। কেয়ামতের ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে। মানুষ সেদিন ভয়ের তীব্রতায় আপনজন থেকে পালাবে। সেই কঠিন দিনে মুমিন ও কাফেরের অবস্থা কেমন হবে, সেটা তুলে ধরা হয়েছে।
সূরাতুত তাকবির!
কেয়ামতের ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সুবিন্যস্ত সুশৃঙ্খল এই বিশ^জগত ভেঙে খানখান হয়ে যাবে। এই সুরায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাকিকত আলোচিত হয়েছে
ক. কেয়ামতের হাকিকত।
খ. ওহি ও রেসালতের হাকিকত।
উভয়টাই ঈমানের রোকন। ঈমানের পূর্ণতার জন্য উভয় হাকিকত জানা ও মানা আবশ্যক। শুরুত কেয়ামতের বর্ণনা। সেদিন পৃথিবীসব যাবতীয় বস্তু যে বিপুল ওলটপালটের মধ্য দিয়ে যাবে, সেটা বলা হয়েছে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-সাগর, আসমান-জমিন, পশু-পাখি, জিন-ইনসান সবই ধ্বংসের আওতায় থাকবে। গোটা জগত প্রচ- কম্পনে প্রকম্পিত হবে। দীর্ঘ সময় ধরে এই কম্পন চলতে থাকবে। জগতের প্রতিটি বস্তুতে এই সম্পন ছড়িয়ে পড়বে। সেদিন বদলে যাবে সবকিছু। ওহির হাকিকত ও ওহি নাযিল হওয়া নবির সিফাত বর্ণিত হয়েছে। যাদের প্রতি ওহি নাযিল হয়েছে, ওহির প্রতি তাদের তুলে ধরা হয়েছে। ওহি নিয়ে আসা ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। যিনি শিরক ও গোমরাহির অন্ধকার থেকে ইলম ও ঈমানের আলোতে বের করার জন্য নেমে এসেছিলেন।
সূরাতুল ইনফিতার!
এই সুরার আলোচনা কেয়ামত দিবসের বর্ণনা ও মানবসৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহর কর্মকুশলতাকে ঘিরে ঘুরপাক খেয়েছে। প্রথমে কেয়ামত সংঘটনকালে মহাজাগতিক কিছু পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, গ্রহ-নক্ষত্র বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে, সাগর ফুলেফেঁপে উঠবে, কবরসমূহ উৎক্ষিপ্ত হবে। সবার হিসাবনিকাশ হবে হবে। যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হবে।
মানুষ স্বভাবগতভাবে অকৃতজ্ঞ। তার রবের নেয়ামত অস্বীকারকারী। মানুষ অনবরত তার রবের নেয়ামত গ্রহণ করে চলে, কিন্তু প্রাপ্ত নেয়ামতের হক আদায় করে না। নেয়ামতের যথাযথ মর্যাদা-কদর করে না। রবের মর্যাদা রক্ষা করে না। এত অনুগ্রহের পরও রবের শোকর আদায় করে না।
মানুষ কেন এমন অকৃতজ্ঞ তার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। নিয়োগকৃত ফেরেশতাগণ বান্দার সবকিছু লিখে রাখে। তার কর্মতৎপরতার প্রতি লক্ষ্য রাখে। আখেরাতে মানুষ দুই প্রকার। আবরার-পুণ্যবান। ফুজ্জার-পাপী। উভয় দলের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। পরিশেষে কেয়ামতদিবসের ভয়াবহতা আর প্রকা-তার কথা বলা হয়েছে। সেদিন মানুষ সব ধরণের শক্তি-সামর্থহীন থাকবে। সমস্ত ক্ষমতা আর কর্তৃত্ব শুধু আল্লাহরই থাকবে।
সূরাতুল মুতাফফিফীন!
এই সুরার আলোচনা অর্থনৈতিক অপরাধ, মুসলমানদের অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলাকারীদের পরিণতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। ওজন-মাপে কম দেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন ব্যক্তিরা আখেরাত ও শেষ বিচারের হিসাবকে ভয় করে না। আহকামুল হাকিমিন বা শ্রেষ্ঠতম বিচারকের মুখোমুখি হওয়ারও পরোয়া করে না।
দুর্ভাগা-পাপীদের কথা বলা হয়েছে। কেয়ামতদিবসে তাদের প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে হুমকি-ধমকির সাথে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। মুত্তাকিদের আমলনামার কথা বলা হয়েছে। তাদের জন্য আছে স্থায়ী সুখ ও সম্মান। সবশেষে মুমিন ও কাফেরের যৌথচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুনিয়াতে কাফেররা মুমিনদেরকে উপহাস করত। আখেরাতে ঘটবে তার উল্টোটা।
সূরাতুল ইনশিকাক!
কেয়ামত বিষয়ক আলোচনাই এই সুরায় ঘুরপাক খেয়েছে। শুরুতে আখেরাতের কিছু চিত্রদৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। কেয়ামতের সময় ঘটিতব্য মহাপরিবর্তনের কিছু চিত্র আঁকা হয়েছে। মানুষের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। মানুষ ইহজীবনে কষ্ট-পরিশ্রম করে। জীবিকা অন্বেষণে চেষ্টা-সংগ্রাম করে। দুনিয়াতে মানুষ ভালোমন্দ যাই করে, আখেরাতে তার ইনসাফপূর্ণ প্রতিদান পাবে। কুরআন সম্পর্কে মুশরিকদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। কসম খেয়ে বলা হয়েছে, তারা একদিন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। সেই ভয়াবহ দিনে সন্তান-সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। শেষে মুশরিকদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে। কারণ আল্লাহর নিদর্শন ও যুক্তি অত্যন্ত স্পষ্ট হওয়া সত্বেও তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না। তাদেরকে জাহান্নামে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
সূরাতুল বুরূজ!
দ্বীনের ওপর অটল থাকাই এই সুরার মূল প্রতিপাদ্য। আসহাবে উখদুদের ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই কিসসাটিতে ঈমান ও আকিদার জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়ার অপূর্ব নজির আছে। এই কিসসায় আছে বাতিলের সামনে অনঢ় অবিচল থাকার প্রেরণা। শুরুতে প্রকা-সব কক্ষপথবিশিষ্ট আকাশের শপথ। কেয়ামত দিবস, প্রেরিত ও সৃষ্টিকুলের শপথ করা হয়েছে। এতকিছুর শপথের পর, কাফেরদের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। তারা একদল মুমিনকে আগুনে জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছিল। তারা হুমকি-ধমকি আর নির্যাতনের মাধ্যমে মুমিনদেরকে দ্বীনচ্যুত করতে চেয়েছিল।
কাফেরদের ঘৃণিত কাজের জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। আল্লাহর শত্রু কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারে আল্লাহর কুদরতের কথা বলা হয়েছে। শেষে প্রতাপশালী ফেরাওন ও সামুদ জাতির কথা বলা হয়েছে। তাদের পাপ ও অবাধ্যতার কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।
সূরাতুত তারিক!
এই সুরার আলোচনা আল্লাহর অপার কুদরতের কিছু প্রকাশ্য নিদর্শনকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। উজ্জ্বল তারকাবিশিষ্ট আসমানের কসম খাওয়া হয়েছে। তারকাগুলো রাতের বেলা জ¦লজ¦ল করে। রাতের আঁধারে তারাগুলো জলেস্থলে পথিককে পথ দেখায়। আল্লাহ প্রতিটি মানুষের কসম খেয়েছেন। আল্লাহর প্রতিটি মানুষের জন্য জন্য পাহারাদার ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। পুণ্যবান ফেরেশতা সবসময় মানুষের দেখাশোনা করে। আল্লাহর অসীম কুদরতের কথা বলা হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ ধ্বংস নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পরও মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম। কেয়ামতদিবসে মানুষের গোপন বিষয় প্রকাশ করা হবে। আখেরাতে মানুষের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। শেষে কুরআনের সত্যতার কথা বলা হয়েছে। কাফেরদেরকে আযাবের হুমকি দেয়া হয়েছে। কারণ তারা কুরআন অস্বীকার করত। কুরআনকে মিথ্যা সাব্যস্ত করত।
সূরাতুল আলা!
মানুষকে সমুচ্চ আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, মানুষকে দুনিয়া থেকে মুক্ত করে আখেরাতের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়াকে ঘিরেই এই সুরার আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে। এই সুরায় মৌলিকভাবে তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছে,
ক. আল্লাহ তাআলার সমুচ্চ সত্ত্বা। আল্লাহ তাআলার কিছু সিফাত। আল্লাহর কুদরত ও একত্বের ওপর কিছু দলিলপ্রমাণ পেশ করা হয়েছে।
খ. ওহি ও কুরআন। যা সর্বশেষ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিল হয়েছে। কুরআন হেফজ করা সহজ।
গ. উত্তম নসিহা। যা জীবন্ত হৃদয়ের অধিকারীদের জন্য উপকারী। সৌভাগ্যবান ঈমানদারগণ এই উপদেশ দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
সূরাতুল গাশিয়া!
শেষদিন, আল্লাহর জন্য নিরংকুশ ক্ষমতা সাব্যস্তকরণকে ঘিরেই এই সুরার আলোচনা ঘুরপাক খেয়েছে। আলোচনাকে মৌলিকভাবে দুটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে,
ক. কেয়ামত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা, সেদিন কাফেরদের দুরবস্থা আর মুমিনদের জন্য থাকবে সুব্যবস্থা।
খ. আল্লাহর একত্বের ওপর দলিল পেশ করা হয়েছে। উট, আসমান-জমিন, পাহাড় সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহর সুস্পষ্ট কুদরতের কথা বলা হয়েছে। এসব আল্লাহর একত্বের দলিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন