একনজরে কুরআন কারিম: ৬
কুরআন কারিমের সুরাগুলোর অতি সংক্ষিপ্ত নির্যাস। একবার পড়ে রাখতে পারি। রব্বে কারিম উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
.
সূরাতুল ফজর!
সুরায় মূলত বলা হয়েছে, কেয়ামতদিবসে কাফেরদের জন্য থাকবে আযাব। প্রধানত তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছে,
ক. আল্লাহর প্রেরিত রাসুলকে অস্বীকারকারী কয়েকটি কওমের কথা বলা হয়েছে। কওমে আদ, কওমে সামুদ, কওমে ফেরাওন ইত্যাদি। পাপাচার ও অবাধ্যতার কারণে তাদের ওপর নেমে আসা আযাব ও ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে।
খ. ইহজীবনে আল্লাহ বান্দাকে ভালো ও মন্দ, প্রাচুর্য ও অভাব দ্বারা পরীক্ষা করেন। মানুষ স্বভাবগতভাগেই সম্পদের প্রতি প্রচ- লালায়িত।
গ. শেষদিনের ভয়াবহতার কথা বলা হয়েছে। সেদিন মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে-ভাগ্যবান ও দুর্ভাগা। দুষ্টমনের পরিণতি আর উত্তম মনের পরিণতির কথা বলা হয়েছে।
সূরাতুল বালাদ!
দুনিয়া কষ্ট ও পরীক্ষার জায়গা। এটাই এই সুরার মূলকথা। শুরুতে মক্কা, রাসুল সা, আদম ও আদমসন্তানকে সম্মান জানিয়ে কসম খাওয়া হয়েছে। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে কষ্ট-ক্লেশের মধ্য দিয়ে। জন্ম ও প্রসবের কষ্ট, দুনিয়ার নানা কষ্ট, আখেরাতে হিসাবের কষ্ট। কয়েকজন মুশরিককে রদ করা হয়েছে। তাদের মন্দকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। তারা সন্তান ও সম্পদ নিয়ে বেজায় গর্ব করত। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার ব্যাপারে অবহেলা করত। আল্লাহ তাদেরকে ইন্দ্রিয় দিয়েছিলেন, জবান, চিন্তাশক্তি ও সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। তারা এসবের কদর করেনি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উৎকৃষ্ট পথ দেখানো হয়েছে। শেষে কাফেরকে হুমকি, মুমিনকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
সূরাতুশ শামস!
ইবাদত ও ভালকাজে উৎসাহ, আল্লাহর অবাধ্যতা ও মন্দকাজে সতর্কবার্তা দেয়াই এ সুরার মূলবার্তা। প্রধানত দুটি ধারায় সুরার আলোচনা বিভক্ত,
ক. মানবমন। আল্লাহ মানুষের মনকে ভালো ও মন্দ, হেদায়াত ও গোমরাহি গ্রহণের প্রবণতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
খ. অবাধ্যতার কিসসা বলা হয়েছে। নমুনাস্বরূপ কওমের সালেহের কথা বলা হয়েছে। কওমে সামুদ আল্লাহর রাসুল সালেহ আ.-কে মানতে অস্বীকার করেছিল। আল্লাহর আইন লঙ্ঘন করেছিল। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি ও নিদর্শন উটনীকে বধ করেছিল। উটনীটি ছিল আল্লাহর দেয়া মুজিযা। আল্লাহ তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করেছিলেন। তাদের ঘটনায় সবার জন্য জন্য শিক্ষা আছে। কেয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি কাফেরের জন্য সতর্কবার্তা। যারা নবিকে মানতে অস্বীকার করে, তাদের জন্যও।
সূরাতুল লাইল!
সাফল্য অর্জনের উপযোগী কিছু গুণাবলীর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ব্যর্থতা ডেকে আনে এমন কিছু বদ খাসলতের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। বান্দা ভালোমন্দ যা করতে চায়, আল্লাহর তার জন্য পথ সহজ করে দেন। মানুষের নানাবিধ চেষ্টা ও কর্মের কথা বলা হয়েছে। পার্থিব জীবনে মানুষের সংগ্রাম সাধনার কথা বলা হয়েছে। মানুষের অন্তিম পরিণতি হবে হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম। সুখ-সৌভাগ্যের পথ দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যের পথও। মুক্তিপ্রত্যাশীর জন্য সুস্পষ্ট পথরেখা এঁকে দেয়া হয়েছে। পুণ্যবান ও পাপী, জান্নাতি ও জাহান্নামির গুণাবলী-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। কিছু মানুষ নিজের সঞ্চিত ধন-সম্পদ দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সতর্ক থাকা কাম্য। রোজকেয়ামতে এসব পুঞ্জীভূত ধনৈশ^র্য কোনো কাজে আসবে না।
আল্লাহ বান্দাদের জন্য হেদায়াত ও গোমরাহির পথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বিশেষ হেকমতে একাজ করেছেন। মানুষকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। যেসব মক্কাবাসী আল্লাহর আয়াত ও রাসুলকে অস্বীকার করেছে, তাদেরকে আল্লাহর আজাব, প্রতিশোধ ও উত্তপ্ত আগুন সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। দুর্ভাগা কাফের এই অতি প্রজ্জলিত আগুনে প্রবেশ করবে। যে আল্লাহর দেয়া হেদায়াত ও আয়াত উপেক্ষা করেছে। শেষে মুমিনের কথা বলা হয়েছে। যিনি আত্মশুদ্ধির জন্য, নিজেকে আজাব থেকে বাঁচানোর জন্য ভালকাজে নিজ সম্পদ ব্যয় করেন। উদাহরণস্বরূপ আবু বকর রা.-এর কথা বলা হয়েছে। তিনি বেলাল রা.-কে ক্রয় করে আজাদ করে দিয়েছিলেন।
সূরাতুদ দুহা!
পেয়ারা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর নিবিড় তত্বাবধানই এই সুরার মূল প্রতিপাদ্য। রাসুলের ব্যক্তিত্ব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। নবিজিকে তার শৈশবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এতিম ছিলেন, গরিব ছিলেন, পথনির্দেশহীন ছিলেন। আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। অভাব দূর করেছেন। যতœ করে প্রতিপালন করেছেন। আখেরাতে বিপুল পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তার রাসুলের জন্য অকল্পনীয় সম্মান প্রস্তুত করে রেখেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল, কেয়ামত দিবসে শাফাআত। নবিজিকে উম্মতের জন্য সুপারিশ করার ক্ষমতা দেয়া হবে। শেষে তিন নেয়ামতের বিনিময়ে তিনটি নসিহত করা হয়েছে। এতিমকে ¯েœহ, অভাবির প্রতি দয়া, দুঃস্থ-অসহায়ের সমস্যা দূর করার ওসিয়ত করা হয়েছে।
সূরাতুল ইনশিরাহ!
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহর কাছে নবিজির উচ্চ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। ঈমান দ্বারা নবিজির বক্ষ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। হেকমত ও আল্লাহর মারেফত দ্বারা নবিজির কলব আলোকিত করে দেয়া হয়েছে। পাপ-পংকিলতা থেকে পবিত্র করা হয়েছে। শিঘ্রিই সংকট কেটে যাওয়ার আশ^াস দেয়া হয়েছে। শত্রুর বিরুদ্ধে আশু জয়ের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। কঠিন অবস্থা সহজ করে দেয়া হবে। নবিজিকে জানানো হয়েছে, যিনি প্রথম থেকে নেয়ামত দিয়ে আসছেন, তার অনুগ্রহ কখনো বন্ধ হবে না। কাফেররা নবিজিকে অনেক কষ্ট দিয়েছিল। এসব বলা হয়েছে নবিজিকে সান্ত¡না দেয়ার জন্য। নবিজির মন ভালো করার জন্য। শেষে নবিজিকে দাওয়াতি কাজের অবসরে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এই এবাদত আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ।
সূরাতুত তীন!
মূলবক্তব্য: মানুষের প্রকৃত মূল্য ও সম্মান তার দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত। মানুষের অসম্মান, হীনতা দ্বীনহীনতায় নিহিত। শুরুতে পবিত্র স্থানের শপথ। যে স্থানকে আল্লাহ নবি-রাসুলের ওপর ওহি নাযিলের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। স্থানগুলো হচ্ছে, বায়তুল মুকাদ্দাস, তুরপাহাড়, মক্কা মুকাররামা। শপথগুলো হয়েছে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বোঝাতে। আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে, অপূর্ব আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যদি তার রবের নেয়ামত ভোগ করে শোকর আদায় না করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের নি¤œতম স্থানে ফেলবেন। আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দলিল দেয়ার পরও আল্লাহ তাআলা এবং পুনরুত্থান অস্বীকার করার কারণে, কাফেরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। শেষে আল্লাহর ইনসাফ প্রকাশ পেয়েছে। মুমিনের জন্য পুরস্কার আর কাফেরের জন্য শাস্তি।
আল্লাহ কি শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন? এই বাক্যটি পুরো সুরার নির্যাস মানে তাওহিদ, নবুয়ত ও পুনরুত্থানকে দৃঢ় সমর্থন করছে। । আল্লাহর হুকুমের কথা বলে আল্লাহর বিচার বা ইনসাফের কথা বলা হয়েছে। এই ইনসাফে কাফেরদের বিরুদ্ধে রাসুলকে সাহায্য করাও অন্তর্ভুক্ত।
সূরাতুল আলাক!
মূল বিষয়: প্রথম নাযিল হওয়া সুরা। ইলম ও ইলম শেখার গুরুত্ব ও মর্যাদা।
এই সুরায় প্রধানত তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছে,
ক. খাতামুন নাবিয়্যিন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ওহি নাযিলের সূচনা।
খ. সম্পদ নিয়ে মানুষের স্বেচ্ছাচার। আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে মানুষের অবাধ্যতা।
গ. এই উম্মতের ফেরাওন, অবাধ্য দুর্ভাগা আবু জাহলের কিসসা। সে রাসুলকে সলাতে বাধা দিয়েছিল। আবু জাহলের কুকীর্তি তুলে ধরা হয়েছে।
সূরাতুল কদর!
মুলকথা: লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরা।
শুরুতে কুরআন নাযিলের কথা। লাইলাতুল কদর সম্মানিত হওয়ার একটি কারণ, এই রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। লাইলাতুল কদর সহ¯্রাধিক রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে আল্লাহর খাস রহমত, নুর ও হেদায়াত নাযিল হয়। আল্লাহ তার প্রিয় মুমিন বান্দাকে অনুগ্রহের চাদরে ঢেকে দেন। কুরআন নাযিলকে স্মরণীয় করে রাখতেই এতসব আয়োজন। এই রাতে পুণ্যবান ফেরেশতাগণ শান্তি ও রহমত নিয়ে নেমে আসেন। ফজর পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করেন।
সূরাতুল বাইয়িনা!
মূলবক্তব্য: রাসুলের রেসালতের মর্যাদা। নবিজির রেসালত সুস্পষ্ট ও পরিপূর্ণ।
প্রধানত তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছে,
ক. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেসালত সম্পর্কে আহলে কিতাবের অবস্থান। তারা রাসুলের আগমনের প্রতীক্ষায় ছিল। যখন হকবাণী নিয়ে রাসুল আগমন করলেন, তারা মানতে অস্বীকার করল।
খ. ইখলাস। এবাদত শুধুই আল্লাহর জন্য।
গ. আখেরাতে সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের পরিণতি।
সূরাতুয যিলযাল!
মূলবক্তব্য: আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন। কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতার সংবাদ প্রদান। কেয়ামতের আলামত, সেদিন মানুষের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থা, আনুগত্যের পুরস্কার, পাপের শাস্তি, ইনসাফের পাল্লায় আমল পরিমাপের কথা বলা হয়েছে।
শুরুতে কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা, বিশেষ করে কেয়ামতের আগে ঘটিতব্য ভয়ংকর ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে। তখন উঁচু উঁচু প্রাসাদ-স্থাপনা সব ধ্বসে যাবে। সুদৃঢ় পর্বতমালা গুঁড়িয়ে যাবে। অবিশ^াস্য বিস্ময়কর সব ঘটনা ঘটবে। সেসব দেখে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়বে। জমিন তার গর্ভে থাকা মৃত লাশ ছুঁড়ে মারবে। মূল্যবান ধাতু, খনিজ পদার্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য উগড়ে দিবে। মানুষ দলে দলে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে। কেউ যাবে জান্নাতে, কেউ জাহান্নামে। মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে: সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগা।
সূরাতুল আদিয়াত!
মূলবক্তব্য: মানুষের ধ্বংস ও ক্ষতির কারণ।
শুরুতে জিহাদের ঘোড়ার কসম খাওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এই ঘোড়ার সম্মান ও গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কসম খেয়ে বলা হয়েছে: মানুষ আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ। চলাবলায় মানুষ সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ্যে ঘোষণাও করে। মানুষের জন্মগত স্বভাবের কথা বলা হয়েছে। সম্পদের প্রতি মানুষের তীব্র লোভের কথা বলা হয়েছে
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। শেষে বলা হয়েছে, মানুষকে সবশেষে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। হিসাব ও প্রতিদানের জন্য। আখেরাতে সন্তান-সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। সেদিন শুধু ঈমান আর আমলে সালেহ কাজে আসবে।
সূরাতুল কারিয়া!
মূলবক্তব্য: প্রতিদান দিবসকে স্পষ্ট করে তোলা।
কেয়ামত দিবসের শুরু ও শেষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মানুষকে দুই ভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত। কেয়ামত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেদিন ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটবে। মানুষ কবর থেকে বের হয়ে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের মতো ছড়িয়ে পড়বে। দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছোটাছুটি করতে থাকবে। প্রচ- ভয়ে ভীত হয়ে কী করবে, প্রথমে বুঝতে উঠতে পারবে না। মাটিতে দৃঢ়ভাবে এঁটে থাকা অটল পাহাড়গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে রঙিন পেঁজা পশমের মতো আকাশে উড়তে শুরু করবে। মানুষ ও পাহাড়ের অবস্থা একসাথে বর্ণনা করা হয়েছে। সুবিশাল পাহাড়ের যদি এমন অবস্থা হয়, সেদিন ক্ষুদ্র মানুষের অবস্থা কেমন দাঁড়াবে?
শেষে মিযান বা দাঁড়িপাল্লার কথা বলা হয়েছে। সেদিন মানুষের আমল মাপা হবে। মাপ অনুযায়ী মানুষ দুই ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে। সৌভাগ্যবান আর দুর্ভাগা। যার নেকআমলের পাল্লা ভারি হবে, সে সুখি। যার বদআমলের পাল্লা ভারী, সে দুঃখী।
সূরাতুত তাকাসুর!
মূলবক্তব্য: আখেরাত নিয়ে উদাসীনতার ব্যাপারে সতর্কীকরণ।
মানুষ দুনিয়ার মোহমায়া আর চাকচিক্যে বিভোর। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভপ্রাপ্তি নিয়ে পরস্পর কামড়াকামড়িতে লিপ্ত। একসময় আচানক মৃত্যু এসে হানা দেয়। সুখের প্রাসাদ থেকে কবরে নিয়ে ফেলে। সুপরিসর পৃথিবী থেকে সংকীর্ণ মাটির কুঠুরিতে আবদ্ধ করে। মানুষ চিরস্থায়ী জীবন ছেড়ে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া নিয়ে ভীষণ মশগুল। তাই মানুষকে ভয় দেখানো আর ভুলের ব্যাপারে সচেতন করার জন্য বারবার ধমক আর সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়েছে। আখেরাতে কী কী বিপদ ও ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে, সেটার বর্ণনা আছে। সেদিন মুমিন ছাড়া আর কেউ এসব থেকে নিস্তার পাবে না। বাঁচতে হলে মৃত্যুর আগেই পরকালের জন্য আমলে সালেহ পাঠাতে হবে। জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ হিসেবে এই একটি সুরাই যথেষ্ট।
সূরাতুল আসর!
এই সুরাকে কুরআন কারিমের অন্যতম ব্যাপক অর্থবোধক সুরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অত্যন্ত সংক্ষেপে এই সুরায় বহুকিছু বলে দেয়া হয়েছে। একেবারে সামান্য কয়েকটা কথায় মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের কারণ স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এই দুনিয়াতে সাফল্য ও ব্যর্থতার সূত্র ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ শুরুতে আসর বা সময়ের কসম খেয়েছেন। মানুষের জীবনটা এই সময়েরই অংশ। সময়ই ধারণ করে নানা বিস্ময়কর ঘটনা, আল্লাহর কুদরত ও হেকমতের পরিচয়বাহী শিক্ষাবলী। কসম খেয়ে বলা হয়েছে, মানবজাতি ক্ষতির মাঝে আছে। চারটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিই এই সমূহ ক্ষতি থেকে নিরাপদ: ঈমান, আমলে সালেহ, পরস্পর হকের উপদেশ, পরস্পর সবরের উপদেশ।
এই চারটি বৈশিষ্ট্য সমস্ত গুণের সমাহার। দ্বীনের মূলভিত। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেছেন: পুরো মানবজাতি যদি শুধু এই সুরা নিয়ে চিন্তাভাবনা করত, তাদের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হত। আরেক সালাফের মতে: এই সমস্ত উলুমে কুরআনের নির্যাস ধারণ করে আছে।
সূরাতুল হুমাযা!
মূলবক্তব্য: দ্বীন ও দ্বীনদারদের উপহাস করা ব্যক্তির প্রতি সতর্কবার্তা।
মানুষের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ানো ছিদ্রান্বেষণকারী, মানুষকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপকারী হীন নিচ লোকদের নিন্দা করা হয়েছে। তারপর নিন্দা করা হয়েছে সম্পদ-ঐশ^র্য জমিয়ে পুঞ্জীভুতকারীদের। তারা অকাট অজ্ঞতা আর ডাহা গাফলতবশত মনে করে, সম্পদ তাদেরকে দুনিয়াতে চিরঞ্জীব করে রাখবে। শেষে পূর্বোক্ত হতভাগা ব্যক্তিদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। তারা চিরন্তন আগুনে প্রবেশ করবে। এই আগুন কখনো নিভবে না। এই আগুন অপরাধীদের পুড়িয়ে ছাই করে চুরচুর করে ফেলবে। এমন জাহান্নামের নাম হুতামা।
সূরাতুল ফীল!
মূলবক্তব্য: বায়তুল্লাহর সুরক্ষায় আল্লাহর অপার কুদরত।
আসহাবে ফিলের ঘটনা ছিল মানুষ বিশেষ করে মক্কাবাসীদের জন্য উপদেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ। সুরায় আসহাবে ফিলের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কাফের আবরাহা কাবা শরিফ ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিল। আল্লাহ তার চক্রান্তকে মোক্ষমভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর নিজের ঘরকে হানাদারদের হাত থেকে অলৌকিক অথচ যুক্তিসঙ্গত উপায়ে রক্ষা করেছেন। আবরাহা আশরামের বিপুল হস্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে আল্লাহ তার খুদে দুর্বল এক পক্ষিবাহিনী পাঠিয়েছেন। পাখিগুলো চঞ্চু ও পায়ের নখে ছোট পাথর বহন করে এনেছিল। ক্ষুদ্র পাথরকণাই ধ্বংসাত্মক অস্ত্রে পরিণত হয়েছিল। পুরো বাহিনীকে সমূলে বিনাশ করে দিয়েছিল। ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এই ঘটনা ঘটেছিল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর। নবিজির জন্মের আগে কিছু ঘটনা ঘটেছিল। এগুলোকে সিরাতের পরিভাষায় ইরহাসাত (إرهاصات) বলা হয়। এগুলোকে নবিজির সত্যতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আসহাবে ফিলের ঘটনাও অন্যতম ‘ইরহাসাত’।
কুরআন কারিমে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠি ধ্বংসের কথা একাধিকবার বর্ণিত হলেও, এই ঘটনা শুধু একবারই বর্ণিত হয়েছে। কারণ,
ক. আসহাবে ফিল ধ্বংসের ঘটনা আল্লাহর কোনো রাসুলকে অস্বীকার করার কারণে ঘটেনি।
খ. মক্কার মুশরিকরা যাতে অহংকারবশত এই ঘটনাকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করতে না পারে। তারা যেন বলতে না পারে, আল্লাহর কাছে তাদের গুরুত্ব মর্যাদা অনেক বেশি বলেই আল্লাহ তাদেরকে আক্রমণ থেকে অলৌকিক উপায়ে রক্ষা করেছেন।
সূরাতু কুরাইশ!
মূলবক্তব্য: কুরায়শের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাদের করণীয়।
মক্কাবাসীর ওপর আল্লাহর খাস অনুগ্রহ ছিল। তারা বছরে দুটি ব্যবসায়িক সফরে বের হত। বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে শীতে ইয়ামান সফর, গ্রীষ্মে শাম সফরে বের হত। আল্লাহ কুরায়শকে দুটি বিশেষ নেয়ামতে ভূষিত করেছিলেন,
ক. শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা।
খ. ব্যবসায়িক সাফল্য ও প্রাচুর্য।
এসব স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে বলা হয়েছিল। অন্যসব ভ্রান্ত বাতিল উপাস্যদের বর্জন করতে বলা হয়েছিল। তারা মানেনি।
সূরাতুল মাউন!
মূলবক্তব্য: আল্লাহর হক ও বান্দার হক। হক্কুল্লাহ, হক্কুল ইবাদ।
এই সুরায় সংক্ষেপে দুই প্রকার মানুষের কথা বলা হয়েছে,
ক. কাফের। আপন রবের নেয়ামত অস্বীকারকারী। হিসাব ও প্রতিদান দিবস অস্বীকারকারী।
খ. মুনাফিক। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমল করে না। লোকদেখানোর জন্য করে।
প্রথম দলের কিছু মন্দ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। তারা এতিমকে অপমান করে। এতিমের সাথে ধমক দিয়ে কথা বলে। তারা এমনটা করে আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য নয়; তাদের স্বভাবজাত রূঢ়তাবশত। তারা ভালো কাজ করে না। গরিব-মিসকিনের প্রাপ্যের কথা মনে করিয়ে দিলেও তারা দান-খয়রাত করে না। তারা খালেকের ইবাদতেও এহসান করেনি, খালক বা সৃষ্টির প্রতিও এহসান করেনি।
দ্বিতীয় দলে থাকা মুনাফিকরাও সলাতের ব্যাপারে উদাসীন ছিল। তারা সময়মতো সলাত আদায় করত না। কখনো বাহ্যিকভাবে নামাজে দাঁড়ালেও, সেটা করত লোকদেখানোর জন্য, আল্লাহর জন্য নয়।
উভয় দলকে ধ্বংসের হুমকি দেয়া হয়েছে। তাদের ন্যাক্কারজনক আচরণের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের জন্য চরম বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।
ইবাদতে ইহসান মানে, এমনভাবে ইবাদত করা, যেন আল্লাহ আমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি। এই পর্যায়ে পৌঁছুতে না পারলে অন্তত এটুকু কল্পনা করা, আমি আল্লাহকে দেখতে না পেলেও, আল্লাহ আমাকে দেখছেন।
সূরাতুল কাওসার!
মূলবক্তব্য: নবিয়ে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহ ও প্রভূত কল্যাণ দান।
আল্লাহ তাআলা নবিয়ে করিমকে দুনিয়া আখেরাতে অগণিত নেয়ামতে ভূষিত করেছেন। অন্যতম একটি নেয়ামত হল: নহরে কাওসার। এজন্য রাসুলকে আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ নিয়মিত সলাত আদায় ও পশু কুরবানি করতে বলা হয়েছে। রাসুলের শত্রুদের চরমভাবে লাঞ্ছিত অপদস্থ করা হয়েছে। রাসুলের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে রাসূলের মুবারক নাম কেয়ামত পর্যন্ত মিনারে-মিম্বরে সসম্মানে উচ্চকিত রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
সূরাতুল কাফিরূন!
মূলবক্তব্য: মুশরিকদের ভ্রান্ত উপাস্য ও ধর্ম থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দায়মুক্তি।
এটা তাওহিদের সুরা। ভ্রষ্ট ও মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির সুরা। মুশরিকরা রাসুলের কাছে শান্তি ও সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব পেশ করেছিল। তাদের দাবি ছিল, একবছর রাসুল তাদের ভ্রান্ত উপাস্যের পূজা করবেন, আরেক বছর তারা রাসুলের উপাস্যের ইবাদত করবে। তখন সুরা কাফিরুন নাযিল হয়েছে। এই সুরার মাধ্যমে কাফেরদের হাস্যকর প্রস্তাব উড়িয়ে দেয়া হয়। মক্কার লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে: ঈমানদার আর মূর্তিপূজারি। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুরা মুমিন ও কাফেরের মাঝে বিভক্তি রেখা হিসেবে থেকে যাবে।
সূরাতুন নাসর!
মহান মক্কা বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের ইজ্জত ও শক্তি আশাতীত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। পুরো জাযিরাতুল আরবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার অবাধ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। মুশরিক ও ভ্রান্ত দলমতের বিষদাঁত ভেঙে গিয়েছিল। মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করেছিল। ইসলামের সমুন্নত বিজয়কেতন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। মূর্তিপূজা ও ধর্ম নিষ্প্রভ হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। মক্কা বিজয়ের আগেই এই সুরার মাধ্যমে আগাম সুসংবাদ জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এটা নবিজির সত্যতারও প্রমাণ। নবিজিকে বাকি জীবন তাসবিহ, তাহমিদ ও ইস্তেগফারে কাটাতে বলা হয়েছে। এই সুরা নাযিল হওয়ার পর থেকে নবিজি তাসবিহ, তাহমিদ ও ইস্তেগফার বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। রুকু-সিজদায় বেশি বেশি পড়তেন,
سُبْحَانَكَ اللهمَّ ربَّنا وَبِحَمْدِكَ، اللهمَّ اغفِرْ لِيْ
আল্লাহুম্মা! ইয়া রাব, আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।
সূরাতুল লাহাব!
মূলবক্তব্য: আল্লাহ ও রাসুলের শত্রু আবু লাহাবের ধ্বংস।
আবু লাহাব এই উম্মতের ফেরাওন। সে ছিল রাসুলের ঘোরতর শত্রু। সে নিজের কাজকর্ম বাদ দিয়ে সারাদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে লেগে থাকত। দাওয়াতি কাজে বাধা দিত। মানুষকে ঈমান থেকে বিরত রাখতে সদা তৎপর থাকত।
আবু লাহাবকে আখেরাতে লেলিহান শিখাময় আগুনে পুড়িয়ে ঝলসে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। তার স্ত্রীকেও শাস্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার জন্য বাড়তি ভিন্নধর্মী আযাবেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তার গলায় আগুনের রশি বেঁধে তাকে জাহান্নামে টানাহ্যাঁচড়া করা হবে।
সুরা লাহাবে আল্লাহর এক বিস্ময়কর আয়াত আছে। এই সুরা যখন নাযিল হয় তখনো আবু লাহাব ও তার স্ত্রী জীবিত। সুরায় বলা হয়েছে, দুজনের জন্য জাহান্নাম অনিবার্য। দুই নরাধম চাইলে ইসলাম গ্রহণ করে, সুরাটিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে পারত। তা হয় নি। আল্লাহ জানতেন, দুই পাপিষ্ঠ কাফের অবস্থাতেই মারা যাবে। এই ঘটনা আল্লাহর গাইবি জ্ঞানের অন্যতম নিদর্শন।
সুরাটিতে ঈমানদারদের জন্যও সুস্পষ্ট এক বার্তা আছে। যারাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করবে, মুসলমানদের ক্ষতি করার অপচেষ্টা চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন। তাদেরকে ঝাড়েবংশে বিনাশ করবেন। তাদের এমন দশা করবেন, যাতে অন্যরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
সূরাতুল ইখলাস!
এই সুরা পুরো কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য। কুরআনে মূলত তিনটি বিষয় আলোচিত হয়েছে: তাওহিদ, আহকাম ও কাসাস। এই সুরায় অল্পকথায় তাওহিদকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাওহিদ মানে আল্লাহ তাআলা এক, এই আকিদাবিশ^াস। তাওহিদ কুরআনি আলোচ্যবিষয়ের এক তৃতীয়াংশ। আল্লাহর এককত্বের প্রমাণও পেশ করা হয়েছে। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। দরকারে-প্রয়োজনে একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া হয়; অন্য কারো কাছে নয়। যাবতীয় পূর্ণতার সিফাত একমাত্র আল্লাহ তাআলার। আল্লাহই সর্বদা মাখলুকের চাওয়া-পাওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন। তিনি সবধরণের অপূর্ণতা থেকে পবিত্র। একমাত্র আল্লাহ তাআলার আসমা ও সিফাতই পূর্ণতার চূড়ান্ত শীর্ষে পৌঁছেছে। তিনিই এককভাবে সার্বিক পূর্র্ণতার বৈশিষ্ট্য ধারণ করেন।
এমন সত্ত্বার প্রতিই অন্তর মহব্বতে পূর্ণ হয়ে ওঠে। তাকে দেখে দৃষ্টি পরম তুষ্টি লাভ করে। তার কালাম শুনে কান শীতল হয়। তার মহব্বত ছাড়া জীবন অর্থহীন। তার দাসত্ব ছাড়া জীবন মূল্যহীন। দিবানিশি তার আনুগত্য ছাড়া জীবন ছন্নছাড়া। তার সমকক্ষ, সমতুল্য কেউ নেই। তাঁর কোনো সন্তান নেই। তিনিও কারো সন্তান নন। ঈসার মতো মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া কোনো মানুষও আল্লাহর মতো ইলাহ নয়। এই সুরায় খিস্টানদের ত্রিত্ববাদ রদ করা হয়েছে। মুশরিকদের বহু উপাস্যের ধারণা রদ করা হয়েছে।
সূরাতুল ফালাক!
বান্দা কীভাবে রহমান রহিমের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করবে, তিন ধরণের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে, তা শেখানো হয়েছে। তিন অনিষ্ট,
ক. সময়ের অনিষ্ট, বিশেষ করে রাতে ছড়িয়ে পড়া অনিষ্ট (৩)।
খ. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট অনিষ্ট, বিশেষ করে জাদুর অনিষ্ট (৪)।
গ. প্রাণ, বদ আত্মা, রূহের অনিষ্ট, বিশেষ করে হিংসার অনিষ্ট।
সূরাতুন নাস!
সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ভয়ংকর শত্রু ইবলিস ও চেলাচামু-ার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ইবলিসের দুইরকম চেলা আছে। জিন চেলা, মানুষ চেলা। তারা মানুষকে নানাভাবে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে। মানুষের মনে কুমন্ত্রণা, ওয়াসওয়াসা দেয়। মানুষকে মন্দকাজে প্ররোচনা দেয়। এই সুরায় আল্লাহ তিন প্রকার তাওহিদের কথা বলেছেন। আল্লাহ কি? তিনি মানুষের রব, মানুষের মালিক, মানুষের ইলাহ। এই তিন তাওহিদ ঠিক থাকলে, আল্লাহ মানুষকে সিরাতে মুস্তাকিম দান করেন। যার কথা সুরা ফাতিহাতে বলা হয়েছে। সেখানে আল্লাহর কাছে সিরাতে মুস্তাকিম প্রার্থনা করা হয়েছিল। এখানে সিরাতে মুস্তাকিম লাভের উপায় বলে দেয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা গেছে, পুরো কুরআন একসুতোয় গাঁথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন