রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭

আমি শিখতে চাই


আবু মাহমুদ। সাদাসিধে, নিম্নবিত্তের একজন নিরীহ লোক। বুড়া মা, ছেলে মাহমুদ এবং স্ত্রীকে নিয়ে তার সাজানো ছোট সংসার। সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস স্থানীয় কাঁচাবাজারের তার সবজির দোকানটি। ছোটবেলায় মারা যান তার বাবা। সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে ছোট থাকতেই। তাই পড়ালেখা করতে পারেনি সে। নিজের পড়ালেখা করতে না পারার অভাবটা সে তার ছেলে মাহমুদকে দিয়ে পূরণ করতে চায়।মাহমুদ একটু বড় হতেই সে আর দেরি করেনি। গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। আবু মাহমুদের স্বপ্ন; তার ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া করে একজন শিক্ষিত আদর্শবান মানুষ হবে। ছেলে মাহমুদও যেন তার বাবার স্বপ্নের কথা বুঝতে পেরেছে। তাই সে খুব ভালোভাবেই পড়ালেখায় মনোযোগ দিয়েছে। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্নভাবে তার বাবাকে সে সাহায্যও করে।
আবু মাহমুদ অত্যন্ত সৎ এবং ধার্মিক লোক। শত ব্যস্ততার মাঝেও সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে পড়ে আসে। ব্যবসায় কোনোপ্রকারের ধোঁকাবাজী সে করে না। মাপ- পরিমাপে কোনোরকমের খেয়ানতও করে না। আল্লাহর বরকতে তার ব্যবসা তাই দিনদিন বড় হচ্ছে। বেচা- বিক্রেতা বেড়ে যাচ্ছে। তার অভাবের সংসারে অনেকটা সচ্ছলতা এসে গেছে।
ইদানীং আবু মাহমুদ একটি সমস্যায় পড়েছে। বাড়ি ফিরে যখন সে প্রতিদিনের বেচা- কেনার লাভাংশ হিসাব করতে বসে, হিসাব শেষে দেখতে পায় অল্প কিছু সংখ্যক টাকা প্রতিদিন কোথায় যেন গায়েব হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন এভাবে যাওয়ার পর সেই অল্প সংখ্যক টাকাগুলো তার জন্য বিরাট লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। বিষয়টি আবু মাহমুদকে খুব ভাবিয়ে তুললো। অনেক চিন্তা ভাবনার পরও সে কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলো না। সেদিন রাতেও বাড়িতে এসে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে একসময় সে  ঘুমিয়ে পড়লো। পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দোকানে গিয়ে বসলো।
বাজারে মাহমুদের শিক্ষক তাঁর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিশ কিনতে আবু মাহমুদের দোকানে এলেন।  জিনিশগুলো নেয়ার পর তিনি আবু মাহমুদের কাছে মূল্য কত এসেছে জানতে চাইলেন। আবু মাহমুদ হিসাব করে জানালো জিনিশগুলোর মূল্য চারশত দশ টাকা। শিক্ষক নিজেও একবার হিসাব করে দেখেলেন। তারপর আবু মাহমুদকে বললেন, ভাই! মনে হয় তুমি হিসাবে ভুল করেছো। চারশত দশ টাকা নয় বরং চারশত পঞ্চাশ টাকা হবে। তুমি চল্লিশ টাকা কম বলেছো।
আবু মাহমুদ দুঃখিত কণ্ঠে বললো, তাই বলেন! এবারই তো বুঝতে পারলাম আমার টাকাগুলো কোথায় গায়েব হচ্ছে! আসলে আমি সঠিকভাবে হিসাব নিকাশ করতে জানি না। কী করবো মূর্খ মানুষ। ছোটকালে তো পড়ালেখা করতে পারিনি।
শিক্ষক আন্তরিকতার সাথে বললেন, দুঃখ করার কিছু নেই ভাই। কাল থেকে তুমি আমার কাছে এসো। হিসাব সংক্রান্ত বিষয়াবলী আমি তোমাকে সংক্ষেপে শিখিয়ে দেবো।
আবু মাহমুদ লজ্জিত কণ্ঠে বললো, এই বুড়ো বয়সে বই-খাতা নিয়ে পড়ালেখার পিছে ছোটাছুটি করলে লোকে কী বলবে! আমার কি পড়ালেখা করার সেই বয়স আর আছে!!
শিক্ষক হেসে বললেন, আরে কী বলো। পড়ালেখা করার কোনো নির্দিষ্ট বয়স আছে নাকি? আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ সা. তো বলেই দিয়ে গেছেন, "তোমরা জ্ঞানার্জন করো দোলনা থেকে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত"। তাহলে ভাই আর কোনো কথা নয়। কাল থেকে তুমি আমার কাছে এসো। জানোই তো শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
আবু মাহমুদ খুশি ভরা কণ্ঠে বললো, অবশ্য আমি আপনার কাছে যাবো। আমি শিখবো। আমি শিখতে চাই। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন